হাদিস আরবি শব্দ। এর অর্থ কথা, বাণী ইত্যাদি। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর বাণী, কাজ ও অনুমোদনকে হাদিস বলা হয়। অর্থাৎ আমাদের প্রিয় নবি (স.) যা কিছু বলতেন তা-ই হাদিস।
তিনি যে সমস্ত কাজ করেছেন তাও হাদিস। আর যে সমস্ত কাজ সাহাবিগণ তাঁর সামনে করেছেন কিন্তু তিনি তাঁদের নিষেধ করেননি বরং ঐ সমস্ত কাজে মৌনসম্মতি দিয়েছেন এগুলোও হাদিস। হাদিসের অপর নাম হলো সুন্নাহ।
সাহাবিগণ রাসুল (স.)-এর সবরকম হাদিসই সংরক্ষণ করতেন। রাসুল (স.) কিছু বললে সাথে সাথে তাঁরা তা মুখস্থ করতেন। নবি করিম (স.) যে কাজ যেভাবে করতেন সাহাবিগণও তা ঠিক তেমনিভাবে আদায় করতেন। অতঃপর নিজ পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধবগণের নিকট এগুলো পৌঁছে দিতেন। এভাবে মহানবি (স.)-এর জীবদ্দশায় হাদিস সংরক্ষণ করা হয়। নবি করিম (স.)-এর ইন্তিকালের পর সাহাবিগণ মজলিস করে হাদিস শিক্ষা দিতেন। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন তাঁদের নিকট হাদিস শিখতে আসতেন। পরবর্তীকালে মুহাদ্দিসগণ রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সকল হাদিস লিপিবদ্ধ করে রাখেন। তাঁরা হাদিসের বহু কিতাব সংকলন করেন। এভাবে আমরাও নবি কারিম (স.)-এর হাদিস লাভ করি।
হাদিসের গুরুত্ব
ইসলামে হাদিসের স্থান অত্যন্ত ঊর্ধ্বে। ইসলামি জীবনব্যবস্থার দ্বিতীয় উৎস হলো হাদিস। আর এর প্রথম উৎস হলো আল-কুরআন। সুতরাং ইসলামে আল-কুরআনের পরই হাদিসের স্থান। হাদিস হলো আল- কুরআনের ব্যাখ্যাস্বরূপ। আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে নানা নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর নবি করিম (স.) হাদিসের মাধ্যমে তা মানুষের নিকট বিশ্লেষণ করেছেন। নিচের উদাহরণটি পড়লে আমরা স্পষ্টভাবে বিষয়টি বুঝতে পারব। যেমন: আল-কুরআনে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কীভাবে আমরা সালাত আদায় করব তা বলে দেওয়া হয়নি। একাকী পড়ব না-কি সকলে মিলে পড়ব, কত রাকআত পড়ব, কোন সময় পড়ব, রুকু-সিজদাহ্ কীভাবে করব ইত্যাদি কিছুই কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। এগুলো আমরা হাদিসের মাধ্যমে পাই। রাসুলুল্লাহ (স.) এসব নিয়মকানুন আমাদের বলে দিয়েছেন। তিনি নিজে সালাত আদায় করে আমাদের হাতেকলমে শিক্ষা দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হাদিস না থাকলে আমরা তা কখনোই জানতে পারতাম না। সুতরাং কুরআনের পরই হাদিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত রাসুল। তিনি ছিলেন মানবজাতির জন্য আদর্শ। তাঁর মাধ্যমেই আমরা আল্লাহ তায়ালার পরিচয় লাভ করি। তিনি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশেই আমাদের সৎপথ প্রদর্শন করেছেন। তিনি মানুষকে সৎকাজের আদেশ দিতেন। মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলতেন। তাঁর এসব আদেশ-নিষেধই হলো হাদিস।
পবিত্র হাদিস আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ বলেছেন, "রাসুল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর। আর যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো।" (সূরা আল-হাশ্র, আয়াত: ৭)
অতএব, রাসুল (স.)-এর হাদিস আমরা পাঠ করব। তার অর্থ বুঝব এবং সে অনুযায়ী আমল করব। তাঁর আদেশগুলো মেনে চলব এবং নিষেধগুলো থেকে বিরত থাকব।
Read more